তেঁতুলিয়া করিডোর বা তেঁতুলিয়া দিয়ে ট্রানজিটের নতুন দাবি কেন ভারতে ভোটের ইস্যু? - BBC News বাংলা (2024)

তেঁতুলিয়া করিডোর বা তেঁতুলিয়া দিয়ে ট্রানজিটের নতুন দাবি কেন ভারতে ভোটের ইস্যু? - BBC News বাংলা (1)

বাংলাদেশ ভারতকে সম্প্রতি রেল, সড়ক বা নদীপথেও নানাভাবে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে। এখন সম্পূর্ণ নতুন একটি রুটে দুই দেশের মধ্যে সড়ক সংযোগের দাবি উঠে এসেছে ভারতে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রের নির্বাচনী প্রচারে।

ঢাকা-দিল্লির মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে এই করিডোর নিয়ে আগে কখনোই তেমন আলোচনা শোনা যায়নি। কিন্তু আপাতত এই তেঁতুলিয়া করিডোরের দাবিতেই সরব এমনিতে নিস্তরঙ্গ জলপাইগুড়ির ওই সীমান্ত এলাকা।

ফলে বাংলাদেশের উত্তরতম প্রান্তে তেঁতুলিয়ার বুক চিরে সোয়া চার কিলোমিটার রাস্তার ওপর অধিকারের দাবিকে ঘিরে জোরালো প্রচারণা চলেছে লাগোয়া ভারতের জলপাইগুড়ি সংসদীয় কেন্দ্রে।

সেখানে ভোট হবে শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ভারতে নির্বাচনের প্রথম দফাতেই।

ভারতীয়দের কাছে এই প্রস্তাবিত রুটের পোশাকি নাম ‘তেঁতুলিয়া করিডোর’ – যে পথে চলাচলের অধিকার পেলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে একটা বিস্তীর্ণ অংশের মানুষের কলকাতা যাতায়াত করাটা অনেক সহজ হয়ে যাবে বলে তারা মনে করে।

এখন রাজগঞ্জ, মেখলিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষকে শিলিগুড়ি হয়ে ঘুরপথে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় যেতে হয়।

কিন্তু বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে সোয়া চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারলে সেই দূরত্বটা প্রায় একশো কিলোমিটার কমে যাবে।

সাথে সময় ও খরচ বাঁচবে, রাস্তায় শিলিগুড়ির মতো ব্যস্ত শহরকেও এড়িয়ে যাওয়া যাবে।

এ জন্যই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে এই ‘করিডোরে’র অধিকার বা ‘রাইট টু প্যাসেজ’ চাইছেন ওখানকার মানুষ।

সম্পর্কিত খবর :
তেঁতুলিয়া করিডোর বা তেঁতুলিয়া দিয়ে ট্রানজিটের নতুন দাবি কেন ভারতে ভোটের ইস্যু? - BBC News বাংলা (2)

ছবির উৎস, BBC VISJO

বাংলাদেশ কেন নিজের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে?

ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির জলপাইগুড়ি আসনের প্রার্থী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তারা আবার জিতে ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের কাছ থেকে এ করিডোরের অধিকার আদায় করেই দেখাবেন।

তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর পাল্টা প্রশ্ন, বিজেপি তো গত ১০ বছর ধরেই দেশের ক্ষমতায় – তাহলে এত দিনেও এ করিডারের অধিকার বাস্তবায়িত হয়নি কেন?

কিন্তু এই দাবি ও পাল্টা দাবির মধ্যেও যে গুরুতর প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, বাংলাদেশই বা কেন তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতীয়দের এই বাড়তি সুবিধাটা দিতে যাবে?

বিষয়টির সঙ্গে বাংলাদেশের ‘টেরিটোরিয়াল ইন্টিগ্রিটি’ বা ভৌগোলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত – কাজেই যত সহজে দাবিটি জানানো হচ্ছে তত সহজে এটি পূরণ হবে বলে আদৌ মনে হয় না।

কিন্তু আপাতত জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার একটা বড় অংশে ভোটের রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে এই তেঁতুলিয়া করিডোরের দাবিকে ঘিরেই।

‘রেল পেরেছি, রাস্তাও পারব’

ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি প্রথমবার জলপাইগুড়ি আসনে জিতেছিল ২০১৯ সালে। গতবার যিনি এই আসনে জিতে এমপি হয়েছিলেন, সেই জয়ন্ত রায়ই এবারও দলের প্রার্থী।

ড: রায় তার ভোটের প্রচারে একটা কথা বারেবারে বলছেন, এবারে জিতলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার 'তেঁতুলিয়া করিডোরে'র দাবি অবশ্যই বাস্তবায়ন করবে।

কিন্তু তাতে তো বাংলাদেশের সম্মতি দরকার, সেটা নিয়ে কি আদৌ কথাবার্তা হয়েছে?

তেঁতুলিয়া করিডোর বা তেঁতুলিয়া দিয়ে ট্রানজিটের নতুন দাবি কেন ভারতে ভোটের ইস্যু? - BBC News বাংলা (3)

বিবিসি বাংলাকে জয়ন্ত রায় বলছিলেন, “অবশ্যই আলোচনা শুরু হয়েছে। হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেল সংযোগ যদি আমরা চালু করতে পারি, তাহলে এই করিডোরও অবশ্যই পারব।”

তার বক্তব্য, এই করিডোর আসলে জলপাইগুড়ির মানুষের খুবই দরকার – কারণ এটা হলে কলকাতার সঙ্গে ওই জেলার দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার কমে যাবে।

প্রস্তাবিত করিডোরটা হল মূলত জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকে চাউলহাটি নামে একটি গ্রাম থেকে শুরু হয়ে, বাংলাদেশের তেঁতুলিয়ার মধ্যে দিয়ে সোয়া চার কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা হবে – যা অন্য পাড়ে গিয়ে মিশবে উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকে।

রাস্তার অনেকটা অংশ বাংলাদেশের ভেতরে তৈরিও হয়ে আছে – এখন বিজেপি নেতারা চাইছেন 'সেটার কাজ শেষ করে তা ভারতীয়দের ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হোক।'

জেলায় বিজেপির দাপুটে সভাপতি বাপী গোস্বামীর বিশ্বাস, 'এটা যদি কেউ করে দেখাতে পারেন, তাহলে ‘রাষ্ট্রনায়ক’ ও ‘মুশকিল আসান’ নরেন্দ্র মোদীই পারবেন!'

তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “বাংলাদেশে আমাদের বন্ধু সরকার আছেন, তারা নিশ্চয়ই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।”

মি. গোস্বামী আরও জানাচ্ছেন, “ছোটবেলা থেকে মুরুব্বিদের কাছে শুনতাম আমাদের এলাকায় না কি এককালে পূর্ব পাকিস্তানের ট্রেন চলত।

পঁয়ষট্টির যুদ্ধের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই ট্রেন পরিষেবা আবার চালু করা গেছে – এখন আবার জলপাইগুড়ি স্টেশন দিয়ে কু-ঝিকঝিক করে বাংলাদেশের যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলছে – ভাবা যায়?”

তেঁতুলিয়া করিডোর বা তেঁতুলিয়া দিয়ে ট্রানজিটের নতুন দাবি কেন ভারতে ভোটের ইস্যু? - BBC News বাংলা (4)

ছবির উৎস, BBC VISJO

ফলে বিজেপি নেতৃত্ব খুবই আশাবাদী – অচিরেই বাংলাদেশ সরকারকে রাজি করিয়ে এই রুটেও ‘ট্রানজিটে’র সুবিধা অবশ্যই অর্জন করা সম্ভব।

‘দশ বছর কি ঘুমিয়ে ছিলেন?’

জলপাইগুড়ি আসনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য নিশ্চিত, ভোটের মুখে 'তেঁতুলিয়া করিডোরে'র দাবি তোলাটা বিজেপির ‘ভাঁওতাবাজি’ ছাড়া আর কিছুই নয়!

জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অনিল চন্দ্র রায় বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিজেপি তো আজ থেকে নয়, গত ১০ বছর ধরেই ক্ষমতায়। কাজেই সদিচ্ছা থাকলে অনেক আগেই তারা এ করিডোর বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু করতেন।”

“মোদী-অমিত শাহ-জেপি নাড্ডাদের মুখে আমরা তো কখনও এই তেঁতুলিয়া করিডোরের কথা শুনিনি! কাজেই আজ বললে কীভাবে মানুষ বিশ্বাস করবে যে এটা স্রেফ কথার কথা নয়?,” পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।

এই ইস্যুতে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেন জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের প্রার্থী নির্মল চন্দ্র রায়।

মি. রায় বিবিসিকে বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে এটা নিয়ে আদৌ কোনও কথা হয়েছে বলেও তো আমরা কখনও শুনিনি।”

বস্তুত এটা ঠিকই যে, আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতিও দিয়েছে বাংলাদেশ।

এর বাইরে আরও একগুচ্ছ ‘কানেক্টিভিটি প্রকল্প’ নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনায় বিস্তর অগ্রগতি হলেও, তেঁতুলিয়ার প্রসঙ্গ দ্বিপাক্ষিক কোনও বৈঠকে কখনও উঠেছে বলে শোনা যায়নি।

তৃণমূল কংগ্রেস ঠিক সে কারণেই সন্দিহান, নির্বাচনী প্রচারে 'তেঁতুলিয়া করিডোরে'র প্রসঙ্গ টেনে এনে বিজেপি আসলে জলপাইগুড়ির মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে।

তবে নির্মল চন্দ্র রায় বলছিলেন, “জলপাইগুড়ির মানুষ বুদ্ধিমান। তারা নিশ্চয়ই এ ভাঁওতাবাজিটা ধরে ফেলতে পারবেন।”

তেঁতুলিয়া করিডোর বা তেঁতুলিয়া দিয়ে ট্রানজিটের নতুন দাবি কেন ভারতে ভোটের ইস্যু? - BBC News বাংলা (5)

চাউলহাটি কী বলছে?

'তেঁতুলিয়া করিডোর' যদি কোনওদিন সত্যিই বাস্তবায়িত হয়, তাহলে সেটি শুরু হবে রাজগঞ্জ ব্লকের সীমান্তবর্তী গ্রাম চাউলহাটি বাজারের সংলগ্ন ‘বর্ডার রোড’ থেকে।

চাউলহাটি একটি ছোট্ট শান্ত জনপদ – গ্রামের হিন্দু-মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় আধাআধি, গ্রামের বাজারকে ঘিরেই সামান্য যেটুকু ব্যস্ততা।

চাউলহাটির পাশ ঘেঁষেই সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া – তার দু’পাশে দু’দেশেই আবার রয়েছে মাইলের পর মাইল সবুজ চা-বাগান। একদিকে জলপাইগুড়ির, অন্য দিকে পঞ্চগড় জেলার।

চাউলহাটি এলাকার প্রবীণ সরস্বতী রায় বলছিলেন, “সেই কবে থেকে করিডোরের কথা শুনতে শুনতে আমরা তো বুড়োই হয়ে গেলাম। তবুও আজ যদি সেটা হয়, এলাকার তরুণদের খুব সুবিধে হবে।”

দোকানদার তাপস দেবনাথ বিশ্বাস করেন, এই করিডোরটা পেলে শুধু তাদের যে কলকাতা যেতেই অনেক সুবিধে হবে তা-ই নয়, ‘গোটা এলাকার চেহারাও পাল্টে যাবে অবধারিতভাবে’।

তবে, আশি ছুঁই-ছুঁই তৌহিদুল হক আবার খুব স্পষ্ট কথা বললেন, “করিডোর পেতে হলে বাংলাদেশকেও তো বিনিময়ে কিছু দিতে হবে। তা আমাদের সরকার কি কিছু ভেবেছে সেটা তারা কী দিতে পারে?”

তেঁতুলিয়া করিডোর বা তেঁতুলিয়া দিয়ে ট্রানজিটের নতুন দাবি কেন ভারতে ভোটের ইস্যু? - BBC News বাংলা (6)

সেখানকার তরুণ যুবক নূর ইসলাম বলছেন, "দুই ‘বন্ধু প্রধানমন্ত্রী’ – শেখ হাসিনা আর নরেন্দ্র মোদী মিলে আলোচনায় বসলে এই করিডোর সমস্যার একটা সমাধান অবশ্যই বেরোনো সম্ভব।"

তবে, এলাকার পুরনো বামপন্থী মহেন চন্দ্র রায় আবার মনে করিয়ে দিলেন, "আজ বিজেপি ভোটের প্রচারে তেঁতুলিয়া করিডোরের কথা তুললেও সিপিএম কিন্তু প্রায় চার দশক ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছে।"

“আগে জলপাইগুড়ি থেকে যখন সিপিএমের মিনতি সেন এমপি ছিলেন, ৩৫ বছর আগে তিনিই কিন্তু পার্লামেন্টে প্রথম তেঁতুলিয়া করিডোরের দাবি তুলেছিলেন”, জানালেন তিনি।

তেঁতুলিয়া করিডোরের দাবির সঙ্গে ওই এলাকার মানুষের যে একাত্মতা তা বুঝে নিতে আসলেই কোনও কষ্ট হয় না।

বিজেপিও ঠিক সেই আবেগটাকেই এবারের নির্বাচনে কাজে লাগাতে চাইছে – কিন্তু এই প্রকল্পকে দিনের আলো দেখাতে হলে সবার আগে যে ‘কূটনৈতিক হোমওয়ার্ক’টা দরকার ছিল সেটাই এখনও করে ওঠা হয়নি বিজেপির!

তেঁতুলিয়া করিডোর বা তেঁতুলিয়া দিয়ে ট্রানজিটের নতুন দাবি কেন ভারতে ভোটের ইস্যু? - BBC News বাংলা (2024)

References

Top Articles
Latest Posts
Article information

Author: Ouida Strosin DO

Last Updated:

Views: 6232

Rating: 4.6 / 5 (76 voted)

Reviews: 91% of readers found this page helpful

Author information

Name: Ouida Strosin DO

Birthday: 1995-04-27

Address: Suite 927 930 Kilback Radial, Candidaville, TN 87795

Phone: +8561498978366

Job: Legacy Manufacturing Specialist

Hobby: Singing, Mountain biking, Water sports, Water sports, Taxidermy, Polo, Pet

Introduction: My name is Ouida Strosin DO, I am a precious, combative, spotless, modern, spotless, beautiful, precious person who loves writing and wants to share my knowledge and understanding with you.